৪ জন সিনিয়র কর্মকর্তাসহ সম্প্রতি মিসর সফরে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

২৪ ফেব্রুয়ারি মিশরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি জরুরি বৈঠকের সিডিউল থাকলেও বিশেষ কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। সুযোগ এসে যায় প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি মিসরটাকে একটু ঘুরে দেখার।

এদিকে মিসরের বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মনীরুল ইসলাম মন্ত্রী মহোদয়কে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিতে মনোনীত করেছিলেন আযহার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি ছাত্র প্রতিনিধি শরীফ উদ্দিনকে। তিনিও একজন ভ্রমণ রসিক শিক্ষার্থী। আগমনের দ্বিতীয় দিনই ২৩ ফেব্রুয়ারি একদফা ঝটিকা ট্যুর হয়ে যায় সুয়েজ খাল অঞ্চলে।

পরদিন কায়রোর ঐতিহ্যবাহি আল-আযহার মসজিদ ও হুসাইনি মসজিদ পরিদর্শন শেষে শরীফ উদ্দীন তাকে নিয়ে যান মিশরের এশীয় অংশে সিনাই মরুভূমি ও তুর পাহাড়ের পথে। এখানে পরিদর্শন করা হয় নবী সালেহ আ. ও নবী হারুন আ. এর সমাধি এবং আল কুরআনে বর্ণিত সেই অভিশপ্ত সামিরির মাকামে সামিরি। পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রসিদ্ধ পর্যটন স্পট শারম আল-শায়খ ভ্রমণ করে ফিরে আসেন কায়রো শহরে। পথিমধ্যে উয়ুনু মুসাও পরিদর্শন করে নেন।

বিকালে কায়রো পৌঁছে কিছু সময় ছাত্র প্রতিনিধি শরীফ উদ্দীনের বাসায় বিশ্রাম নিয়ে শুরু হয় ভ্রমণের পরবর্তী পর্ব। এবারের গন্তব্য সুদান বর্ডারের কাছে মিসরের দক্ষিণাঞ্চল আসওয়ান ও লুক্সুর।

কায়রো বিমানবন্দর হতে বিমানযোগে রাত ১১টায় তারা পৌঁছেন ফরাও সভ্যতার ভূমি আসওয়ানে। এখানে নাইল ক্রজের শিপে পূর্বেই প্যাকেজ বুকিং ছিল। এ প্যাকেজে রয়েছে ফাইভ স্টার মানের হোটেল সুবিধাসহ নীল নদে ভেসে ভেসে নীলের তীরে গড়ে উঠা প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা পরিদর্শনের এক অনন্য আয়োজন।

এখানে সর্বপ্রথম পরিদর্শন করা হয় আসওয়ান হাই ডেম। এরপর ফিলাই টেম্পলসহ বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্য পরিদর্শন শেষে নীলের বুক চিরে শিপ রওয়ানা হয় লুক্সুরের পথে। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে শিপ লুক্সুর এসে পৌঁছে। সূর্যাস্তের পূর্বেই এখানকার প্রসিদ্ধ বেশকিছু টেম্পল ও জাদুঘর ঘুরে দেখা হয়। পরের দিনটি কাটে প্রাচীন স্থাপত্যে ঘেরা লুক্সুর শহর পরিদর্শন ও টুকটাক কেনাকাটার মধ্য দিয়ে।

লুক্সুরের সবোর্চ্চ আকর্ষণ ওয়াদিউল মুলুক। এটিই প্রাচীন ফরাও সম্রাটদের মূল সমাধিভূমি। প্রবহমান প্রাচীন নীল নদের অথৈয় জলরাশি যে বন্যা সৃষ্টি করতো নিজেদের সম্রাটদের লাশকে সেই বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে প্রাচীন মিশরীয়রা পাহাড় বেষ্টিত এ উচ্চভূমিকে তাদের রাজাদের সমাধি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। প্রত্নততত্ত্ববিধ ও ঐতিহাসিকদের গবেষণা অনুপাতে আল কুরআনে বর্ণিত বিখ্যাত ফরাও সম্রাটদের এখানেই সমাহিত করা হয়েছিলো। ফরাও সম্রাট হাটসিবসুট টেম্পল এসবের অন্যতম। মন্ত্রী মহোদয়ের ভ্রমণের শেষ দিনটি (২৮ ফেব্রুয়ারি) কাটে এ ওয়াদিউল মুলুকেই। লুক্সুরের সবচেয়ে বড় টেম্পল মাবাদুল কারনাকও ঘুরে দেখা হয়। ছাত্র প্রতিনিধি শরীফ উদ্দীনের ভ্রমণ রুচিবোধ ও দক্ষতায় তিনি বরাবরই মুগ্ধ হন এবং তার ভূয়সী প্রশংসাও করেন।

২৮ তারিখ রাতে তিনি বিমানযোগে কায়রো ফিরে আসেন।পরদিন ভোরেই ছিল মন্ত্রী মহোদয়ের ফিরতি ফ্লাইট। রাষ্ট্রদূত মনীরুল ইসলাম দূতাবাসের সব কর্মকর্তাদের নিয়ে কায়রো অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তাকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসেন। ১ মার্চ ভোরে রাষ্ট্রদূত ও ছাত্র প্রতিনিধির পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয় আনুষ্ঠানিক বিদায়। মিসরীয় সভ্যতার হাজারও স্মৃতি নিয়ে বিকাল ৫টায় তিনি অবতরণ করেন বাংলাদেশের মাটিতে।